Love

Technology

Fashion

Recent Posts

ঠোঁটের তিল’টা

১১:১৪ PM 1 Comment


– আমার ঠোঁটের উপরের তিল টা দেখেছেন?
পাত্রী দেখতে এসে পাত্রীর মুখে এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে আমার সামনে বসে থাকা ভদ্রলোক যে বেশ অবাক হয়েছেন, তা আমি বুঝতে পারছি। তারপরও স্বাভাবিক ভঙ্গীমায় তিনি উত্তর দিলেন,
– জ্বী দেখেছি।
সামনে সেন্টার টেবিলের উপর ট্রে তে দু’কাপ চা রাখা আছে। হালকা ঝুঁকে আমি চা’এ চিনি মেশাতে মেশাতে বললাম,
– ঠোঁটের উপরে তিল থাকলে প্রেম করে বিয়ে হয়। ক’চামচ চিনি দিবো?
– এক চামচ। আপনি তাহলে বিয়ের আগে প্রেম করতে চাচ্ছেন?
প্রতিউত্তরে শুধু মুচকি হাসলাম আমি। তারপর আবারো পালটা প্রশ্ন করলাম,
– আপনার নাম টা যেন কি?
– শিশির। আপনার নাম তো মিহি?
– হুম। নিন, চা শেষ করুন।
শিশিরের সামনে আমি যতটা ভদ্র হয়ে বসে আছি আদৌ আমি ততটা ভদ্র নই। আমাদের আলাদা কথা বলার সুযোগ দিয়ে চলে যাওয়ার সময় মা বলে গিয়েছিলেন, “আল্লাহ্‌র দোহাই লাগে, এই সহজ সরল ছেলেটাকে প্যাঁচে ফেলবি না”। অন্য সময় হলে মা কে একটা ভেংচি কেটে দিতাম কিন্তু তখন ভদ্রতার বেশ ধরে চুপচাপ বসে থাকতে হয়েছে আমাকে।পাত্রপক্ষ চলে যাওয়ার পর আমি ঘরে এসে শাড়ি খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এর মধ্যে মায়ের আগমন ঘটলো। মা কে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম,
– এত দেরী করলে কেন?
মা’র ভ্রু কুঁচকে গেল,
– কিসের দেরী?
– আগেরবার পাত্রপক্ষের প্রস্থান করতে লেট হয়েছিল কিন্তু তোমার এই ঘরে আসতে লেট হয় নি।
– বাজে বকবি না তো। শোন্ না, বলছি যে, ছেলে পছন্দ হয়েছে তোর?
– হুম।
এই মুহূর্তে মা যথেষ্ট উৎফুল্ল,
– সত্যি?
– এভাবে বারবার জিজ্ঞেস করলে আমি কিন্তু কনফিউজড হয়ে যাব মা।
– না থাক, আর জিজ্ঞেস করবো না। আলহামদুলিল্লাহ্‌, যাক শেষমেশ….
শাড়িটা পুরোপুরি খুলে ফেলতেই মা কথা থামিয়ে দিলেন। চোখেমুখে তার একরাশ বিস্ময়,
– এ কি! তুই টাইলস আর টি-শার্টের উপর শাড়ি পরেছিলি!
– হ্যাঁ তো?
– তো মানে! ওরা যদি দেখে ফেলতো?
– দেখে নি তো। এটা নিয়ে আর কথা বাড়িয়ো না প্লিজ।– শুধু বাপ-ছেলে এসেছিলো বলে বেঁচে গেলি। নয়তো কোনো মহিলা সাথে আসলে মজা টের পেতি।
আমার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে রাগে গজগজ করতে করতে মা নিজের কাজে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর বাবা আসলেন, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,– হুম বলেছো।
– তাহলে?
– তাহলে কি?
– উফ মিহি প্লিজ, গতকাল অফিসে কাজের প্রেশার এত বেশি ছিল যে, আমার মাথা হ্যাং হয়ে ছিল তখন। তাই কি বলতে কি বলে ফেলেছি। প্লিজ তুমি আর রাগ করে থেকো না।
– স্যরি আর প্লিজ বলাটা তোমার মুদ্রাদোষ হয়ে যাচ্ছে মিথুন।
– ঠিক আছে আর বলবো না।
– আচ্ছা। রাখছি এখন।
– রাখছো মানে?
– মানে ফোনের লাইন কেটে দিচ্ছি।
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মিথুন তার ধৈর্য্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিলো,
– কাল দেখা করবে?
– আচ্ছা, সকাল ১১ টায় বকুলতলায় চলে এসো।
– থ্যাংকস।
আর কোনো উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করি নি বলে আমি ফোন রেখে দিলাম। আমি জানি, মিথুন এখন আর কল দিবে না। আর এ ও জানি, কল দেয়ার জন্য ওর হাত টা নিশপিশ করছে কিন্তু ভয়ে কল দিতে পারছে না।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে যাওয়ায় রেডি হওয়ার সময় তাড়াহুড়ো লেগে গিয়েছিলো। শাওয়ার নিয়ে জর্জেটের সবুজ শাড়ি টা কোনোরকম পরে আর ভেজা চুলগুলো ভালভাবে না আঁচড়িয়েই রওনা হয়ে গেলাম। রিক্সায় উঠে খেয়াল করলাম কাঁচের চুড়ি, কানের দুল, কাজল, লিপস্টিক কিছুই পরা হয় নি। ভ্যানিটিব্যাগে সবসময় কাজল থাকে, তাই তৎক্ষণাত কাজল টা চোখে টেনে নিতে পারলেও বাকিগুলো অসম্পূর্ণ থেকে গেল। তবে এজন্য আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি জানি, মিথুন আমাকে এই এলোমেলো অবস্থায় দেখেও বরাবরের মত চোখে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে হা করে তাকিয়ে থাকবে।
ঠিক ১১.২০ এ আমি বকুলতলায় পৌঁছালাম। রিক্সাভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সামনে এগোতেই খানিকটা দূরে দেখতে পেলাম, আনমনে দাঁড়িয়ে সিগারেট টেনে যাচ্ছে মিথুন। ব্লাক কালারের শার্ট আর ব্লু কালারের জিন্সে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ মিথুন কে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে। শার্টের হাতা আবার ফোল্ড করে রেখেছে। অবশ্য ব্রেকআপের দিন সব বয়ফ্রেন্ডদেরই রূপ বেড়ে যায়। আমাকে দেখে তড়িঘড়ি করে মিথুন সিগারেট টা ফেলে দিতে নিলে আমি দূর থেকে হাত নেড়ে “না” করলাম।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– আমাকে দেখে সিগারেট ফেলে দিতে “না” করেছি না কতদিন?
– করেছো। কিন্তু সিগারেটের গন্ধে তোমার ক্ষতি হবে।
– হোক, তাতে তোমার কি? সিগারেটের গন্ধ আমার ভাল লাগে।
– এতোই যখন ভাল লাগে তখন নিজে টানলেই তো পারো।
আমি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই মিথুন ঢোক গিললো,
– আচ্ছা বাদ দাও, যাক বাবা অবশেষে তোমার রাগ ভাঙলো।
– রাগ ভেঙেছে কে বললো?
– তার মানে এখনো রাগ করে আছো?
– রাগ করে আছি কে বললো?
– উফ মিহি…
– আমি এখনো নাস্তা করি নি। ক্ষিদে পেয়েছে খুব।
– ঠিক আছে, তুমি বসো। আমি কিছু কিনে নিয়ে আসছি।
– উঁহু, কিছু কিনে আনতে হবে না। আমি ফুচকা খাবো।
– এখন?
– হ্যাঁ, নয়তো কখন?
– আচ্ছা, ফুচকাও খাবে। তার আগে অন্য কিছু খেয়ে নাও।
মিথুনের কথা পাত্তা না দিয়ে আমি ফুচকাওয়ালার কাছে এগিয়ে গেলাম। পিছু পিছু মিথুনও আসছে।
– মামা, এক প্লেট ফুচকা দাও জলদি। ঝাল দিবা বেশি করে।
আমার কথা শুনে ফুচকাওয়ালা মামা মুচকি হেসে ফুচকা বানাতে শুরু করলেন।
তাড়াহুড়োর মধ্যে শাড়ির আঁচল পিন করতে ভুলে গিয়েছিলাম। এখন বারবার আঁচল সামলাতে গিয়ে ফুচকাটা খেতে পারছি না শান্তিমতো। এ অবস্থা দেখে মিথুন বললো,
– আমি খাইয়ে দিবো?
– না। অন্যের হাতে ফুচকা খেয়ে শান্তি নেই। তুমি বরং আমার শাড়ির আঁচল টা ধরে রাখো।
শাড়ির আঁচল ধরে রাখার কথা শুনে মিথুনের চোখ কপালে উঠে গেল।
– কি হল? দাঁড়িয়ে আছো কেন? আঁচল টা ধরে রাখতে বললাম না?
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার ধমক শুনে আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে কাচুমাচু হয়ে শাড়ির আঁচল ধরে নিস্তেজ হয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো মিথুন। খেয়াল করলাম, এই মুহূর্তে চারপাশের সবার দৃষ্টিকেন্দ্র আমরা দু’জন।
ফুচকা খাওয়া শেষ করে দুজন পাশাপাশি হাঁটছি। মিথুন বললো,
– চলো কোথাও বসি?
আমি মিথুনের দিকে না তাকিয়ে উত্তর দিলাম,
– না। হাঁটতেই ভাল লাগছে। তুমি তো কিছু খেলে না।
– সকালে নাস্তা করে বের হয়েছি।
– ওহ্। আজ অফিস নেই? ছুটি নিয়েছো?
– তুমি মনে হয় ভুলে গেছো আজ শনিবার।
– হুম।
আনমনে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মিথুনের দিকে চোখ পড়তেই খেয়াল করলাম, সে আমার দিকে অপলক দৃষ্টি তে চেয়ে আছে। আমি একটু ইতস্তত বোধ করে বললাম,
– সামনে তাকিয়ে হাঁটো।
– আজ তোমাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে মিহি।
– হুম জানি। ব্রেকআপের দিন সবাইকেই এমন অন্যরকম সুন্দর লাগে।
কথাটা শোনার সংগে সংগে মিথুন দাঁড়িয়ে গেল,
– মানে? কি বলছো এসব?
– গতকাল আমাকে দেখতে এসেছিলো। পছন্দ হয়েছে ওদের। খুব তাড়াতাড়ি হয়তো বিয়ের ডেটও ফিক্সড হয়ে যাবে।
– এ খবর টা তুমি আগে দিলে না কেন?
– আগে দিলে কি হত?
– দেখো মিহি, এতদিন তোমার অনেক হেয়ালী আমি সহ্য করেছি। কিন্তু আজ তুমি সীমা অতিক্রম করছো। আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলবো।
– কোনো লাভ হবে না তাতে। বাবা আমাদের সম্পর্ক কখনোই মেনে নিবেন না তা তোমাকে শুরু থেকেই বলে আসছি।
– তাহলে?
– তাহলে আবার কি? আমি বিয়ে করে নিবো আর তুমি কিছুদিন দুঃখবিলাস করবে। তারপর এক সময় তুমি আমাকে ভুলে যাবে।
– এসব কি কথা? তুমি সত্যি সত্যি ই বিয়ে টা করছো?
– না করার কি আছে!
– তাহলে আমার সাথে এতদিন কি করেছো?
– প্রেম করেছি।
– বিয়ে করার ইচ্ছে না থাকলে প্রেম করেছো কেন?
– তোমাকে ভালবাসি তাই।
– আমি না তোমার কথা কিছু বুঝতে পারছি না মিহি।
– বুঝতে হবেও না। যা বলছি মন দিয়ে শুনো, আমার সাথে এখন থেকে আর কোনো যোগাযোগ রাখবে না। খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করবে। নিজের যত্ন নিবে। এখন আর কোনো রিলেশনশিপে না গিয়ে পারলে সরাসরি বিয়ে করে ফেলো। ঠিক আছে? আমি আসছি তাহলে।
যাওয়ার সময় আমি আর পেছন ফিরে তাকালাম না। আমার মন বলছে, মিথুন এখনো আমার পথের দিকে চেয়ে আছে। কষ্ট যে আমারো হচ্ছে। ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আবেগ অনুভূতিগুলো ঠিকঠাকভাবে প্রকাশ করতে পারি না বলে কেউ আমাকে বুঝতে পারে না। একমাত্র মিথুন ছাড়া। আচ্ছা, মিথুন কি আজও আমাকে ঠিকঠাক বুঝতে পারছে? ও কি বুঝতে পারছে আমার কষ্ট টা? ও কি আমার ব্যর্থতাটাও বুঝতে পারছে? ও কি দীর্ঘশ্বাস চেনে? তার উত্তাপ বুঝে?
বাসায় এসে শুনলাম আগামী শুক্রবার আমার এংগেজমেন্ট। মা কে শর্ত জুড়ে দিলাম, এংগেজমেন্টে শুধু মামা আর খালামণি ছাড়া আর কোনো বাড়তি মানুষ কে যেন ইনভাইট না করে। এংগেজমেন্ট টা যেন ঘরোয়াভাবে করা হয়। নয়তো আমি আমার মত পালটে ফেলবো। মা প্রথমে রাজি না হলেও পরে ঠিকই রাজি হয়ে গেলেন।
ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নীতু কে কল করে বললাম, কাল সকাল সকাল যেন বাসায় চলে আসে। সারাদিন আমার সাথে থাকবে। নীতু হচ্ছে আমার অন্যতম বেস্টফ্রেন্ড। মন খারাপ হলেই ওকে বাসায় ডেকে নিই। ওর সাথে আড্ডা দিলে মন ফুরফুরে হয়ে যায় একদম।
এর মধ্যে মিথুন একবার কল করেছিলো। কিন্তু আমি রিসিভ না করে এংগেজমেন্টের ডেট টা টেক্সট করে জানিয়ে দিয়েছি।
রাতে ঘুম আসছে না একদম। চার বছরের একটা সম্পর্ক এক নিমিষে শেষ করে দেয়া মুখের কথা না। আমার ভেতরে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে তা আমি ছাড়া কেউ জানে না। এমনকি মিথুনও না মনে হয়। মিথুন নিশ্চয়ই আমাকে ছলনাময়ী ভাবছে। কিন্তু আমি নিরুপায়। কিছু করার নেই আমার। বাবা কখনোই আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবেন না। যদিও মিথুন ব্যাংকে জব করছে, ভাল পজিশনে আছে। কোনো মেয়ের বাবা’ই তাকে প্রত্যাখ্যান করবে না। শুধু আমার বাবা বাদে। এক্ষেত্রে মিথুনের একটাই অপরাধ, সে আমার সাথে এতদিন প্রেম করেছে। প্রেমের বিয়েতে বাবা মোটেও বিশ্বাসী নন। তারপরও আমি মিথুন কে ভালবেসেছিলাম কারণ ভালবাসতে বাধ্য হয়েছিলাম। ওর মধ্যে এমন কিছু ব্যাপার আছে, যা আমাকে মারাত্নকভাবে টানে। আমি বুদ হয়ে থাকি তার নেশায়। আমি প্রকাশ করি না বলে মিথুন হয়তো বুঝতে পারে না। প্রেমিকা হিসেবে আমি কোনো কালেই ভাল ছিলাম না। আমাকে সহ্য করা খুব কঠিন ব্যাপার। কিন্তু এই কঠিন কাজটাই চারটা বছর ধরে খুব সহজভাবে করে এসেছে মিথুন। তবে এত বেগুণের মধ্যে একটা ভাল গুণ আমার আছে। তা হল, আমি খুব সহজে ভড়কে যাই না। আমার ধৈর্য্য আর মানসিক শক্তি প্রবল। যে কোনো পরিস্থিতি খুব ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি খাটিয়ে সামলে নিতে পারি আমি। আর আবেগ জিনিস টা আমার মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম থাকার কারণে, খুব সহজে কেউ আমাকে ঘায়েল করতে পারে না। একমাত্র মিথুন আমাকে ঘায়েল করতে পেরেছিলো তার সহজ সরল নিষ্পাপ অনুভূতিগুলো দিয়ে। এই দুনিয়াতে যদি একটি মানুষও ঠিকঠাক আমাকে বুঝে থাকে,তাহলে সে হচ্ছে মিথুন। এমনকি বাবা-মা’র পরে আমাকে যদি কেউ বেশি ভালবেসে থাকে, সেও হচ্ছে মিথুন। আমাদের ভালবাসায় কোনো খাদ নেই। নেই কোনো অপূর্ণতা। শুধু এই ভালবাসাটুকু কে বুকে আঁকড়ে ধরে বাকিটা জীবন অনায়াসে পার করে দেয়া যাবে।
অবশেষে এংগেজমেন্টের দিন ঘনিয়ে এলো। আমার শর্ত অনুযায়ী মামা, খালামণি আর আমার কিছু বান্ধবী ছাড়া আর কোনো আমন্ত্রিত অতিথি ছিল না। আজ দ্বিতীয়বারের মত শিশিরের সাথে আমার দেখা হল। এর মধ্যে শুধু ফোনে কথা হয়েছে দু’তিনবার। পাত্রপক্ষের সাথে বেশ কয়েকজন অতিথি এসেছেন।
খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে আংটি পরানোর সময় হলে আমি একটু সময় চেয়ে নিলাম সবার কাছ থেকে। তারপর শিশির কে প্রশ্ন করলাম,
– আপনি তানিয়া কে বিয়ে করলেন না কেন?
তানিয়ার নাম শুনে শিশির রীতিমতো ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। শিশির কে চুপ থাকতে দেখে আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম,
– কি হল, উত্তর দিচ্ছেন না কেন? নাকি আপনার কাছে এর কোনো উত্তর নেই?
উপস্থিত সবাই আমাদের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। বাবা বললেন,
– কি হয়েছে রে মা? তানিয়া কে? তুই কি কিছু বলতে চাইছিস?
– হ্যাঁ বাবা। শুধু বলতে না, প্রমাণও করতে চাইছি। তোমাদের পছন্দ করা পাত্র একজন খুনি।
এবার সবাই বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেল। মা এগিয়ে এসে বললেন,
– কি বলতে চাইছিস পরিষ্কার করে বল।
শিশিরের বাবাও একই কথা বললেন। তারপর আমি একের পর এক বলতে শুরু করলাম,
– শুনো তাহলে, এই ভদ্রলোক দু’বছর আগে তানিয়া নামের এক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। তারপর সেই মেয়ে কনসিভ করলে শিশির তার দায় অস্বীকার করে। তারপর তানিয়া এবরশন করতে বাধ্য হয়। আমি দুঃখিত, এতগুলো গুরুজনদের সামনে আমাকে এ ধরনের আপত্তিকর কথা বলতে হচ্ছে। কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না আমার। শিশিরের মত ভালমানুষদের মুখোশ আড়ালে আবডালে নয়, লোকসম্মুখে প্রকাশ করতে হয়। একটা ভ্রণ হত্যা করা কি খুনের দায় নয় বাবা? শুধু তাই নয়, এ ঘটনার পরও সে আরো কয়েকজনের সাথে একই কাজ করে। ভালোবাসার নামে একের পর এক প্রতারণা করেছে শুধু।
শিশিরের মা প্রতিবাদ জানালেন,
– তোমার মুখের কথা আমরা বিশ্বাস করতে যাব কেন? প্রমাণ দেখাও….
– আমি জানি প্রমাণ ছাড়া এ কথাগুলো কেউ বিশ্বাস করবে না। তাই প্রমাণ আমার সাথেই আছে। তানিয়া বোরখা টা খুলো, আর ছবিগুলো দেখাও। রাইমা আর ফারজানা তোমরাও ছবিগুলো দেখাও। আরেকজন আছে কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে সে আসতে পারে নি। আপনারা চাইলে তার সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিতে পারবো আমি।
সব ছবি আর মেসেঞ্জারে চ্যাট দেখে শিশিরের বাবা-মা’র চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। অনেক চাপাচাপির পর শিশিরও সব কিছু স্বীকার করে নিলো। তানিয়া আমার অনুমতি নিয়ে মনের জ্বালা মিটানোর জন্য শিশির কে কষে একটা থাপ্পড় মারলো। তানিয়ার দেখাদেখি বাকিরাও এগিয়ে গেল। শিশিরের বাবা-মা মাথা নিচু করে বসে রইলেন। একের পর এক থাপ্পড় খেয়ে মুখোশ উন্মোচনের অপমানে অপমানিত হয়ে মাথা নিচু করে সবার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল শিশির।
সবাই চলে যাওয়ার পর খালামণি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– শিশিরের ব্যাপারে এতকিছু তুই কি করে জানলি?
আমি আয়েশ করে বসে বলতে শুরু করলাম,
– সেদিন নীতু এসেছিলো বাসায়। ওকে বলেছিলাম….
“তোকে একটা কাজ দিবো, করতে পারবি নীতু?
– কি কাজ বল।
– শিশিরের ছবি দিয়ে কয়েকটা গার্লস গ্রুপে একটা পোস্ট করবি।
– কি বলিস এসব? কেন?
– আগে শোন না সবটা। আজকালকার ছেলেদের দিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই। ঘটক তো শুধু পারিবারিক বৃত্তান্ত নিয়ে আসতে পারে, চরিত্র বৃত্তান্ত আমাদেরই যাচাই করতে হবে।
– তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু কি পোস্ট করবো? আর পোস্ট করে যদি নেগেটিভ কিছু না পাস তাহলে ছেলেটার সম্মানহানি হবে না?
– এমনভাবে কাজ টা করতে হবে যেন সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে। শোন্, পোস্টের ক্যাপশন দিবি,
“আমার কাজিন, গতকাল দেশে ফিরেছে। এতদিন স্কটল্যান্ড ছিল। একমাসের মধ্যে বিয়ে করে আবার স্কটল্যান্ড ব্যাক করবে। এটি একটি পাত্রী চাই পোস্ট।”
ব্যস, তখন আগ্রহীরা ইনবক্সে যোগাযোগ করবে আর যদি কোনো কাহিনী থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সেই একেকজন ধুয়ে দিবে। আর হ্যাঁ, পোস্ট টা অবশ্যই ফেইক আইডি দিয়ে করবি।
– কি পিকুলিয়ার বুদ্ধি রে তোর মিহি! ঠিক আছে ছবি টা দিয়ে দিস, আমি পোস্ট করে দিবো।”
তারপর সেই পোস্টের কমেন্ট বক্স থেকেই ওই মেয়েগুলো কে পাওয়া। ওদের সাথে যোগাযোগ করে পুরো ঘটনা খুলে বলে ওদের কে আমার এংগেজমেন্টে ইনভাইট করেছিলাম। প্রথমে আসতে চাইছিলো না কিন্তু পরে শিশির কে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার লোভে আসতে রাজি হয়েছে। শুনো খালামণি, তোমরা তো মনে করো, তোমরা যাদের ধরে নিয়ে আসো তারা হচ্ছে ধোয়া তুলসীপাতা আর সবচেয়ে যোগ্য। আর আমরা যাদের পছন্দ করি তারা হচ্ছে দুনিয়ার অযোগ্য। আসলে ব্যাপার টা হচ্ছে, ভালো খারাপ সব মানুষের মধ্যেই আছে। শুধু একপাক্ষিকভাবে বিচার করলে হয় না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে, একই ঘটনা একটা ছেলের সাথেও ঘটতে পারে। এই যুগের ছেলে-মেয়েরা কেউ ই কারোর চেয়ে কম নয়। ছেলেদের মধ্যে যেমন শিশিররা রয়েছে, তেমনি মেয়েদের মধ্যেও এমন ভদ্র মুখোশধারী আছে। আর সবাই যে এমন, তা কিন্তু না। আমরা চোখ কান খোলা রেখে একটু সচেতন থাকলেই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
পুরো কাহিনী শুনে বাবা হতাশ হয়ে বললেন,
– ঘটকের উপর আর ভরসা করতে পারছি না। তোর যদি কোনো পছন্দ থাকে বলতে পারিস মা।
– না না বাবা, আমার কোনো পছন্দ নেই। আমি তো জানি তুমি এসব মেনে নিবে না তাই কোনো রিলেশনে জড়াই নি এখনো।
বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
পরেরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সোজা চলে গেলাম মিথুনের অফিসে। অফিসের সামনে মিথুন কে দেখতে পেয়ে দৌঁড়ে গিয়ে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তারপর বুকে এলোপাথারি কিছু কিল ঘুষি মেরে বললাম,
– চুলের প্রেমিক তুমি? ঘাস খেয়ে প্রেম করতে আসছো? প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর তুমি হাত পা গুটিয়ে বসে ছিলে!
মিথুন আমাকে থামানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
– আরে আগে আমার কথাটা তো শুনো? হাত পা গুটিয়ে বসে থেকে তোমার ফিরে আসার অপেক্ষাই করছিলাম।
খানিকটা শান্ত হয়ে আমি জানতে চাইলাম,
– মানে?
– মানে আমি জানতাম তুমি ফিরে আসবে। বিয়ে টা যেভাবেই হোক বানচাল করে দিবে।
– কিভাবে জানতে?
– আমার চেয়ে ভাল তোমাকে আর কে বুঝে বলো!
আমি আবারো মিথুনের বুকে মুখ গুঁজে দিলাম। খানিক বাদে খেয়াল করলাম, জায়গা টা খুব নীরব। তৎক্ষণাত মনে পড়লো আমার, আজ তো শনিবার। মিথুনের বুক থেকে মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলাম,
– আজ তো শনিবার। তাহলে অফিসের সামনে কি করছো?
– তুমি ফিরে আসবে জানতাম, সাথে এও জানতাম আবারো ভুল করে তুমি অফিসেই আমাকে খুঁজতে আসবে। আমার যে শনিবার অফ ডে,এটা তুমি কখনোই মনে রাখতে পারো না।
সারপ্রাইজ দিতে এসে আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম। চোখ দুটো টলমল করছে আমার। এত ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না আমি।
বিয়ে বানচালের সব কাহিনী শুনে মিথুন বললো,
– তোমার তো ভয়ংকর বুদ্ধি! কিন্তু তোমার বাবা যখন জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কোনো পছন্দ আছে কিনা তখন তুমি আমার কথা বললে না কেন?
– যেন পরে কোনো সমস্যা হলে ফ্যামিলির ঘাড়ে দোষ চাপাতে পারি।
মিথুন শুধু মুচকি হাসলো,
– কিন্তু তোমার তো এসব প্রি প্লানড ছিল। তাহলে ব্রেকআপের নাটক টা করার কি দরকার ছিল?
– উঁহু, তুমি না কিচ্ছু বুঝো না। ব্রেকআপ করে কিছুদনের জন্য তোমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। নয়তো তুমি বারবার ফোন দিয়ে ঘ্যানরঘ্যানর করে আমার মন মেজাজ নষ্ট করে দিতে। ঠান্ডা মাথায় কাজ টা করতে পারতাম না।
– তা ঠিক। তোমার উপর যথেষ্ট বিশ্বাস থাকলেও,একটা ভয় সবসময় ই কাজ করতো। যদি কোনোভাবে তুমি বিয়ে টা করে ফেলো! তোমাকে যদি বাধ্য করা হয়! তখন আমি আর ঠিক থাকতে পারতাম না।
– ইশ, এত সহজ আমাকে কোনো কিছুতে বাধ্য করা! শুনো এখন তোমার কাজ হচ্ছে ঘটক কে দিয়ে আমার বাসায় প্রস্তাব পাঠানো।
– চিন্তা করো না, কাল পরশুর মধ্যে ঘটক চলে যাবে।
তিনদিন পর….
বাবা এসে বললেন,
– ঘটক সাহেব আরেকটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। এই নে ছবি, এটাকেও গার্লস গ্রুপে পাঠিয়ে দেখ তো মা, কোনো ঝামেলা আছে কিনা।
মিথুনের ছবি টা হাতে নিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলাম,
“এটার ক্যাপশন কি দেয়া যায়”
#বিবাহ_সমাচার

সুন্দরী প্রতারক

১১:১০ PM Add Comment

বড় ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে বড্ড ঝামেলায় পড়ে গেলাম।
মেয়ে নাকি ভাইয়াকে পছন্দ না করে আমাকেই পছন্দ করে ফেলেছে। ব্যাপারটা সবার কাছে খারাপ মনে হলেও আমি কিন্তু বেজায় খুশি।
একপ্রকার খুশিতে আত্মহারা বলা চলে।
মেয়েটা যখন আমাদের সামনে এসে লাজুক ভঙ্গিতে বসেছিলো, তখনই আমার বুকের বা পাশে ছ্যাৎ করে উঠে। এতো সুন্দরী একটা মেয়েকেই কিনা আমাকে আজীবন ভাবী বলে ডাকতে হয়?

যাক, আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে মেয়েটাকে ভাবী না ডেকে জানু ডাকার সুযোগ পেয়ে গেলাম। এইদিকে আমার পরিবারের লোকজন তো খুব চটে আছে মেয়েটার উপর। আমার বড়ভাইকে পছন্দ হয়নি ভালো কথা। কিন্তু যে ছেলে দেখতে গেছে তার ছোটভাই কে কিভাবে পছন্দ হয়? মেয়েটার কি লজ্জা শরম বলতে কিছুই নেই? পরিবারই বা কি শিক্ষা দিয়েছে মেয়েটাকে?
আমাকে পরিবার থেকে সরাসরি বলে দেওয়া হয়েছে, ওই মেয়ের সাথে আমি যেন কোনোরকমের যোগাযোগ না রাখি। এরকম নির্লজ্জ মেয়েকে কখনোই তারা বউ হিসেবে মেনে নিবেনা।
আমিও পরিবারের সবাইকে বলে দিছি, ‘ছিঃ ছিঃ আপনারা কিভাবে ভাবলেন যে এরকম একটা ফালতু মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখবো? আমি তার দেবর হওয়ার কথা, আর সে কিনা আমাকে পছন্দ করেছে’পরিবারের সবাইতো ভিষণ খুশি। যা হইছে ভালোই হইছে। এরকম একটা নির্লজ্জ মেয়ে ঘরের বউ হয়ে আসলে এই পরিবারের মান সম্মান বলে কিছু থাকতোনা।
আমি কিন্তু গোপনে ঠিকই মেয়েটা মানে জাকিয়ার সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছি। নিয়মিত রেস্টুরেন্টে দেখা করছি। সেলফি তুলছি, রিকশায় ঘুরছি, পার্কে বসে গল্প করছি, মোবাইলে কথা বলছি। দিব্যি কাটছে আমাদের দিন গুলো। কিন্তু বারোটা বাজতেছে আমার ম্যানিব্যাগের।
এইদিকে জাকিয়া বিয়ের জন্য জোরাজুরি করা শুরু করলো। কিভাবে যে কি করবো সেটাই বুঝতে পারছিনা। এখনো বড় ভাইয়ার জন্য মেয়ে পছন্দ করে উঠতে পারেনি আমার পরিবার। এরমধ্যে যদি আমার বিয়ের কথা বলি? তাও আবার আমার পরিবারের চোখে নির্লজ্জ মেয়ে জাকিয়াকে, অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সহজেই অনুমান করা যায়।
পালানো ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছিনা। জাকিয়াও আমার সাথে পালাতে রাজি। জাকিয়াট কথা হচ্ছে, ‘যেভাবেই হোক, আমি শুধু তোমাকেই চাই তানজিব। আর কিচ্ছু আমার চাইনা। কিন্তু পালাতে হলে আমাদের কিছু টাকা লাগবেই। সেইদিকে খেয়াল রেখো।’জাকিয়ার কথায় চিন্তায় পড়ে গেলাম। এই সময় এখন টাকা পাবো কোথায়? এমনিতে এই এক মাসে জাকিয়ার সাথে ঘুরে অনেক টাকা নষ্ট করে ফেলেছি। হঠাৎ মাথায় চলে আসলো ভাইয়ার বিয়ের সময় মেয়েকে দেওয়ার জন্য বানিয়ে রাখা গহনা গুলোর কথা।

ব্যস, অতি সতর্কতার সাথে গহনা গুলো চুরি করে ওই রাতেই আমি আর জাকিয়া পালিয়ে যাই। কিন্তু কোথায় যাবো? সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। জাকিয়াকে বললাম চলো একটা হোটেলে থাকি আজকের রাতটা। জাকিয়া রাজি হলোনা। এতো রাতে অবিবাহিত আমরা দুজন হোটেলে গেলে নাকি ঝামেলা হতে পারে। জাকিয়ার নাকি একটা বন্ধু আছে। যে বাসায় এখন একাই আছে। তার বাবা মা গ্রামে বেড়াতে গেছে। আজকের রাতটা ওখানে কাটিয়ে সকালেই আমরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নিব। তারপর অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যাবে।
আমি ভাবছিলাম জাকিয়ার বন্ধু হয়তো কোনো মেয়ে। এখন দেখি জাকিয়ার বন্ধু একটা ছেলে। বেশ হ্যান্ডসাম ও স্মার্ট।
যাইহোক, আমি আর জাকিয়ার বন্ধু শুইলাম এক রুমে, আর জাকিয়া শুইলো আরেক রুমে। জাকিয়ার বন্ধুর ঘুম চলে আসলেও আমার একটুও ঘুম আসছেনা। এতো সুন্দরী একটা মেয়ে সকাল হলেই আমার বউ হতে যাচ্ছে, ভাবতেই কেমন শিহরন লাগছে। হঠাৎ করে জাকিয়ার বন্ধু চোখ খুলে ঠাট্টা করে বললো, ‘কাল তো বিয়ে করছেনই। এখন একটু ঘুমানতো’
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। আর চোখ বন্ধ করলাম। সারাদিন অনেক দখল গেছে। সত্যি একটু ঘুমানো দরকার।
ঘুম ভেঙে দেখি সকাল হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। কিন্তু এ কি? বালিশের পাশে রাখা মোবাইল টা পাচ্ছি না। খাটের পাশে রাখা ব্যাগটা নেই। জাকিয়ার বন্ধু কেও দেখতে পাচ্ছি না। জাকিয়ার রুমে গিয়ে দেখি জাকিয়াও নেই।
জাকিয়ার খাটে দেখি একটা সাদা কাগজ কি সব লেখা।
হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম।
‘তুমি মানুষটা ভিষণ ভালো। তোমার প্রতি আমরা দুজনে কৃতজ্ঞ সারাজীবনের জন্য। তোমাকে মন থেকে হাজারবার ধন্যবাদ। তোমাকে দেখতেই কেমন ইনোচেন্ট লাগে। তাই তোমাকেই আমি টার্গেট করি। আমাকে দেখতে আসা সম্বন্ধ ভাঙ্গা। আমাদের বিয়ের জন্য টাকা জোগাড় করা সব তোমার জন্যই সম্ভব হয়েছে। কোনো একদিন তোমাকে এক বেলা খাওয়ার জন্য দাওয়াত করবো। মন খারাপ করোনা লক্ষিটি’
কাগজ টা পড়ার পর মনে পড়ে গেল এক ভন্ড বাবার কথা। মাঝে মাঝে ভন্ডদের কথাও সত্যি হয়। ভন্ড বাবা বলেছিলেন, ‘সুন্দরীদের কখনো বিশ্বাস করতে নেই’

এক পাতিল দই

১০:৫৭ PM Add Comment

মিষ্টির দোকান থেকে দই কিনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি এমন সময় এক গাড়ী পুলিশ এসে দাঁড়ালো আমার সামনে। গাড়ী থেকে নেমেই কয়েকটা পুলিশ সোজা বন্দুক আমার দিকে করে বললো, এই প্যাকেটের মধ্যে কি আছে এক্ষুনি বের করুন নাহলে আপনাকে গুলি করতে বাধ্য হবো। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। সকাল সকাল এ কি বিপদে পড়লাম রে বাবা। ভয়ে ভয়ে বললাম, স্যার এর মধ্যে বগুড়ার দই আছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে লক্ষ্য করে বললাম, স্যার আমার বিয়েশাদি হয়নাই। আপনি দয়া করে বন্দুকটা বুকের দিকে অথবা মাথার দিকে তাক করে ধরুন। ওখানে গুলি লাগলে আমি আর এই জীবনে বিয়ে করতে পারবো না। ছোটবেলা থেকে আমার বিয়ে করার খুব ইচ্ছে।পিছন থেকে এসআই সাহেব এগিয়ে এসে বললো, মানুষের এতো ইচ্ছে থাকতে তোর এই বিয়ে করার ইচ্ছের কারণ টা কি? আমি বললাম, বিয়ের পর অনেকগুলো বাচ্চাকাচ্চা হবে। তারপর শিশুপার্কে গিয়ে এক ব্যাটার উপর প্রতিশোধ নিবো। সেদিন প্রেমিকার সাথে শিশুপার্কে গেছিলাম। এক ব্যাটা আমাদের ঢুকতে দেয়নাই। বলছে ওখানে শিশু ছাড়া ঢোকা নিষেধ।
এসআই আমার কানমলা দিয়ে বললো, পরিবার পরিকল্পনার শ্লোগান শুনিস নাই? দুইটি বাচ্চার বেশি নয়৷ একটি হলেই ভালো হয়। আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম, স্যার বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। সেইখানে আমার ৩-৪ বাচ্চাকাচ্চা আপনাদের কাছে বেশি হয়ে গেলো? এসআই ধমক দিয়ে বললো ,অই তুই চুপ থাক। বেশি কথা বলিস। ঐ কেউ একজন এর প্যাকেট খুলে দেখ ভিতরে কি আছে।
একজন এগিয়ে এসে প্যাকেট খুলে দেখে বললো, স্যার ভিতরে দই ছাড়া কিচ্ছু নাই।
এসআই বললো, দইটাও চেক করে দেখ। গাড়ির ভিতরে দেখ চামুচ আছে সেটা নিয়ে আয়।
কনস্টেবল একটা চামুচ এনে দই থেক এক চামুচ মুখে দিয়েই বললো, স্যার ফার্স্টক্লাস দই। জীবনে এমন দই খাইনাই।
এসআই বললো, কি তাই নাকি? সত্যি ভালো তো?
কনস্টেবল বললো, জ্বী স্যার। একদম খাটি দই।
এবার আমার বিশেষ যায়গায় দিকে বন্দুক তাক করে থাকা কনস্টেবল এসআইকে বললো, স্যার বউয়ের যন্ত্রণায় বাসায় মিষ্টি খাইতে পারি না। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে ওখান থেকে এক চামুচ দই খাই? খুব খাইতে ইচ্ছে করতেছে।এসআই বললো, ঠিক আছে খা। তবে এক চামুচের বেশি খাবি না।
এরপর সেই কনস্টেবল এক চামুচ মুখে দিয়েই বললো, স্যার দই খেয়ে মুখের চুলকানি বেড়ে গেছে। আরেক চামুচ খাই স্যার?
এসআই বললো, ঠিক আছে খা।
এবার খেয়াল করে দেখলাম, সব পুলিশ সদস্যরাই এসআইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্থাৎ এরাও খেতে চায়।
আমি দৌড়ে গিয়ে সেই কনস্টেবলের হাত থেকে দইয়ের হাঁড়ি দুইটি কেড়ে নিয়ে বললাম, স্যার আর দই দেওয়া যাবে না। আপনার দুই কনস্টেবল আমার এক হাঁড়ির অর্ধেক দই শেষ করছে। আমি আর দই দিবো না।
এবার আরেক কনস্টেবল বলে উঠলো, ও ভাই আমারে এক চামুচ দই দেন না। এমন করেন কেন?
আমি রেগে গিয়ে বললাম, দেখেন ভাই। আমার আব্বা আমাকে এমনেই বিশ্বাস করে না। ভাববে আমি রাস্তায় দই খেয়ে হাঁড়ি খালি করেছি। আপনারা থাকেন আমি চালালাম।
এসআই সাহেব বললেন, “আজ নির্বাচন” জানো না?এসব প্যাকেট নিয়ে ঘুরলে পুলিশ সন্দেহ করবেই।যাইহোক, এটা কোথাকার দই?
আমি বগুড়ার দই বলে বাসার দিকে হাঁটতে লাগলাম। একবার পিছন ফিরে দেখি সবাই আমার হাতের দইয়ের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছি বাসায় গিয়ে আব্বারে কি জবাব দিমু।
বাসার প্রায় সামনে চলে এসেছি। দেখি গলির মোড়ে কয়েকজন পুলিশ সমস্যা দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম শেষ। এবার আর আমার দই নিয়ে বাসায় যাওয়া হবে না। কোনো চিন্তা না করেই দইয়ের প্যাকেট দুইহাত দিয়ে শক্ত করে ধরে দিলাম ভৌ-দৌড়।
আমি দৌড়াচ্ছি পুলিশ সদস্যরা আমার পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে। আমি আরো জোরে দৌড়াচ্ছি। ওরাও আমার পিছু আরো জোরে দৌড়াচ্ছে। বেশকিছু দূর দৌড়ানোর পর হাল ছেড়ে দিলাম। ইতিমধ্যে উনারা আমাকে ধরে ফেললো। আবার বন্দুক আমার দিকে তাক করে বললো, সত্যি করে বল এই প্যাকেটের মধ্যে কি আছে?
আমি বললাম, আমার জীবন থাকতে বলবো না।। এর আগেরবার যে ভুল করছি সেটা আর করবো না।
একজন পুলিশ সদস্য এসে আমার কাছে থেকে দইয়ের প্যাকেট কেড়ে নিয়ে খুলে দেখে বললো, আরে এর মধ্যে তো দই।
আমি বললাম, হ্যাঁ দই।উনি বললেন, তাহলে তুই দৌড়াচ্ছিলি কেন?
আমি রাগ নিয়ে বললাম, আপনারা মানুষের হাতে দই দেখলেই খাওয়া শুরু করেন। এই ভয়ে দৌড় দিছি।
হঠাৎ একজন পুলিশ সদস্য বললো, তোর কথা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। চল থানায় চল।
আমি থানায় দইয়ের প্যাকেট নিয়ে বসে আছি। এরমধ্যে আব্বা এসে হাজির।
আব্বা- তুমি কি করছ? পুলিশ তোমাকে ধরছে কেন?
আমি- আব্বা আমি পুলিশকে দই খাইতে দেই নাই। তাই আমাকে ধরে নিয়ে আসছে।
আব্বা – জেলে বইসা আমার সাথে মজা করো?
আমি- আব্বা বিশ্বাস করেন আমি মজা করতেছি না।
হঠাৎ সেই এসআই এসে বললো, আরে তুই এইখানে কেন? এসআই আর আব্বাকে পরের ঘটনা সব খুলে বলতেই এসআই বললো, তোকে মুক্তি দিতে পারি এক শর্তে।।
আব্বা বললেন, কি শর্ত এসআই সাহেব?
এসআই বললেন, দইয়ের হাঁড়ি দুটো আমাকে দিতে হবে। নাহলে সাতদিন জেল খাটতে হবে।
আব্বারে বললাম, আব্বা আমার সাতদিন জেল খাটতে কোনো সমস্যা নাই। আপনি দইয়ের হাঁড়ি দুইটা নিয়ে যান।
আব্বা আমাকে ধমক দিয়ে বললো, তুই চুপ থাক হারামজাদা। এসআই সাহেব হাঁড়ি দুইটা আপনি রাখেন। তবুও আমার ছেলেরে ছাইড়া দেন।
আমি আর আব্বা থানা থেকে বের হচ্ছি। এমন সময়
এসআই সাহেব বললেন, কিছুদিন ধরে বউ রাগ করে শ্বশুর বাড়ি গেছে। আমার বউয়ের রাগ আবার বগুড়ার মিষ্টি দই ছাড়া ভাঙ্গানো যায় না।
থানার বাইরে আইসা আব্বাকে বললাম, আব্বা জোরে হাঁটেন। আব্বা বললেন, কেন? আমি বললাম, আপনি না বলছিলেন একটা টক দই আর একটা মিষ্টি দই নিতে। এরা তো মিষ্টি দইটা খাইছে টক দইটা নিচে আছে। এসআইয়ের বউ যখন টক দইয়ে মুখে দিবে তখন কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন?
হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম আশেপাশে আব্বা নাই। কিন্তু একটু দূরে চোখ রাখতেই টের পেলাম আব্বার মতো একটা লোক দৌড়ে পালাচ্ছে।

অসমাপ্ত ভালবাসার কিছু অসমাপ্ত সত্য গল্প।

১২:০৬ AM Add Comment





আমার হবু বরের সাথে আমার এক বান্ধবীর প্রেম চলছে! কথাটা শুনতে খারাপ হলেও এটাই বাস্তব! প্রথমবার যখন আমি ব্যপারটা টের পাই তখন খুব একটা পাত্তা দেইনি কিংবা সুযোগ পাইনি বুঝে উঠার। ধীরে ধীরে দুজনের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা আমাকে এ ব্যপারে জানার সুযোগ করে দিলো। আমার হবু বরের নাম ঈশান। পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়ে ঠিক হয়। আমাদের বিয়ে ঠিক হবার আগে তিন বছরের প্রেম ছিলো আমাদের।
ঈশানের সাথে আমার প্রথম দেখা মানালিতে। একটা স্কলারশিপের মাধ্যমে ইন্ডিয়ার একটা সেমিনারে অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছিলাম আমি। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের ছাত্রী। একই সেমিনারে মাসুদ ভাইও ছিলো। তরুন এক ডাক্তার। ঈশান তখন মেডিকেলে পড়ে, ইন্টার্ন শুরু করবে। সেই সেমিনারের একটা অংশ ছিলো কাশ্মীর ভ্রমন। কাশ্মীরের সৌন্দর্যে আমি বিভোর হয়ে ছিলাম, আর ঈশানের ভাষ্যমতে সে তখন আমার প্রেমে পড়ে! প্রকৃতির প্রতি এত মুগ্ধতা নাকি ও আর কারো চোখে দেখিনি! আমার অবশ্য প্রথম দেখায় ওকে নিতান্ত ভদ্র ও বুদ্ধিমান ছেলে ছাড়া কিছুই মনে হয়নি। সেমিনার শেষে দেশে ফেরার পথে পুরোটা সময় দুজনে মেতে ছিলাম আড্ডায়। আমার গল্পের আয়োজন ছিলো জাহাঙ্গীরনগরের বটতলা, রাতের সৌন্দর্য আর সিগ্ধ সকাল নিয়ে। ও বারবার প্রশংসা করছিলো শহীদ মিনারের গরুর দুধের চায়ের আর বলছিলো মেডিকেলের বদ্ধ পড়াশোনাতেও মানব সেবার একটা অন্যরকম অনুভূতি যেন হাতছানি দেয়! সেই আড্ডার শেষ ছিলো বাড়ি ফেরা অব্দি।
বাড়ি ফেরার পর আমি ঈশানকে বেমালুম ভুলে বসি। আমার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরি। ও অবশ্য দেশে ফেরার আগেই আমার সাথে যোগাযোগের সব উপায় করে রেখেছিলো। একদিন সন্ধ্যাবেলায় ঈশানের কল এলো। ফোন করেই বললো "কি নন্দিনী! এক কাপ চা খাবার সময় হবে? বটতলার বসে আছি। দেখা মিলবে?"
মেডিকেল পড়ুয়া ছেলের মুখে এমন কাব্য বেমানান হলেও সেদিন দেখা হয়েছিল। সেদিনই বুঝতে পারি এই ছেলে খুব পাগলাটে! এর পাল্লায় পড়া যাবে না। তবে মাস দুয়েকের মধ্যে এই পাগলাটে ছেলেই আমাকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করে। ঝুম বৃষ্টিতে কদমফুল হাতে তার সেই তীব্র আবেদন উপেক্ষা করার শক্তি আমার ছিলো না। আমাদের প্রেম ছিলো দুরন্ত! আমাদের প্রেমে একাকার হয়ে গিয়েছিলো হাইওয়ে, বটতলা, টিএসসি, শহীদ মিনার, মেডিকেলের করিডোর, ক্যাফেটেরিয়া আর কার্জনের সবুজ মাঠ।
এদিকে আমার মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষার মাঝখানে একদিন ঈশানের জরুরি তলব! দেখা হবার পর জানতে পারলাম সাহেবের সরকারী হাসপাতালে পোস্টিং হয়ে গেছে! খুব তাড়াতাড়ি ঈশান ক্যারিয়ারটাকে ঠিক করে ফেলবে এ ব্যাপারে সন্দেহ রইলো না আর! চাকরীতে জয়েনের কিছুদিন পর ওর বাসা থেকে আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব আসলো। সবকিছু ঠিকই ছিলো, কিন্তু বেঁকে বসলেন আমার বাবা! বাবা বললেন "ঈশান নিজের কর্মজীবনের শুরু করছে, অথচ তুমি এখনো ক্যারিয়ারটাকে গোছাও নি! তোমার কর্মজীবন শুরুর আগে তোমার বিয়ে আমি দিচ্ছি না!" বাবার এরকম সিদ্ধান্তে প্রচন্ড রাগ হলো আমার! কিন্তু বাবা তার মতামতে অবিচল। আর ছোটবেলায় মাকে হারানো আমার কাছে বাবাই সব। এ কারনে বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও সময়টা পিছিয়ে গেলো। আমি ক্যারিয়ার গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম আর ঈশান অন্য সম্পর্কে মজে গেলো! তার কাছে রায়া হয়ে উঠলো নতুন মুগ্ধতা!
একদিন হটাৎ করেই বাবার শরীর প্রচন্ড খারাপ হয়ে পড়লো! বাবাকে নিয়ে টানা ১০ দিন হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি। আত্নীয় স্বজনরা আসছে, দেখে চলে যাচ্ছে। ঈশানও যেন দায়সারাভাবে খোঁজ নিয়ে পালাতে পারলে বাঁচে। নতুন চাকরি তাই কাজের চাপের বাহনা! টের পাই কোন পরিবর্তনের। কিন্তু হাসপাতালের করিডোর সব ভুলিয়ে দেয়। একা হাতে এতকিছু সামলে আমি যখন ক্লান্ত আর দিকহারা তখন বাবা আমাকে আরো দিকহারা করে শেষ নিশ্বাসটুকু ফেললেন! আমার একমাত্র আপন মানুষটা এক মুহূর্তে আমার সব চেষ্টাকে শেষ করে আমাকে একা করে চলে গেলেন! হতাশা আর আর অসহায়ত্ব তখন আমাকে আকড়ে ধরতে পারেনি একটা মানুষের কারনে। সে মাসুদ ভাই। বাবার চিকিৎসা ওনার হসপিটালেই হয়েছিলো। বাবার চলে যাওয়ায় মাসুদ ভাই, তার মা আর ওনার ছোট বোন তিন্নি আমার পরিবার হয়ে উঠলো। একা বাড়িতে আমাকে তিন্নি একা থাকতে দেয় না। খাইয়ে দেয়, কথা বলে মন ভালো রাখে, রাতে ঘুমের মধ্যে যখন আমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠি, তিন্নি আমাকে জাপটে ধরে রাখে! মাসুদ ভাই প্রতি বিকেলে দেখা করতে আসে। সে খুব চাপা স্বভাবের কিন্তু লোকটার মধ্যে আমার প্রতি একটা বিশেষ যত্ন কখনো কখনো যেন প্রকাশ হয়ে যায়। ঈশান এরমধ্যে একবার এসে দেখা করে যায়। চেনা ঈশানকে বড্ড অচেনা লাগে আমার।
সেদিন রাতে খুব ঝড় বৃষ্টি! ঈশানের এক কলিগ ফোন করে আমাকে। জানায় ঈশান আর রায়ার কথা। সম্পর্কের গভীরতার কথা। কিছু ছবিও পাঠায়। লোকটার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও যেন ভুলে বসি আমি! বাবার মৃত্যুর ধাক্কার কাছে এ তো কিছুই না! তবে এটা যেন কফিনের শেষ পেরেকের মতো ঠেকলো আমার কাছে! কাঁদতে ভুলে বসেছিলাম অনেক আগেই। তাই পাথরের মতো নিথর হয়ে গেলাম।
এই ঘটনা যেন আমার মতো দূরন্ত মেয়ের দুটি ডানা কেটে দিলো! উড়তে চাওয়া দুটি পাখির একটি যেন আরেকটির ডানা কেটে দিয়ে একাই উড়ে গেলো নতুনের ডাকে!
এই ঘটনার ঠিক ৭ দিন পর নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাকে একটা উপহার দিলো। জানতে পারলাম আমি খুব নামকরা একটা এনজিওতে প্রোগ্রামিং অফিসার পোস্টের জন্য সিলেক্টেট হয়েছি! নতুন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। কর্মজীবন শুরু থেকেই আমায় দুহাত ভরে দিলো। বাবার স্বপ্ন বৃষ্টির পরের ঝকঝকে আকাশের মতো হেঁসে উঠলো। মাসুদ ভাইয়ের বোন তিন্নির বিয়ে হলো ধুমধাম করে। আর চাপা মাসুদ ভাই তার দীর্ঘদিনের চাপা ভালোবাসা প্রকাশ করলো। যেটা তৈরি হয়েছিলো সেই মানালিতেই!
আমরা মানালিতেই হানিমুনে গেলাম। আমি ডানাছাড়া পাখি হয়েও কেমন যেন উড়তে লাগলাম। আমার ডানা কেটে দেয়া যেন শাপেবর হলো আমার জন্য! মানসিকতায় এতটা দৃঢ় হয়ে উঠলাম যে, জীবনকে ভালোবাসতে শিখে গেলাম।
তবে সবসময় জন্মদাতার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতায় দুচোখ ছলছল করে উঠে কেবল! সে যে আমায় উড়তে শিখিয়েছে!!!
# ডানা_ছাড়া_পাখি
©নিগার সুলতানা বিলতু
অলীক উপাখ্যান।